শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:১৪ অপরাহ্ন
আবেদ হোসাইন, যশোর প্রতিনিধি, কালের খবর:
যশোরের সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সিজারের মাধ্যমে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,চিকিৎসকরা নরমাল ডেলিভারি করাতে নিরুৎসাহিত ও ভয়ভীতি দেখান বলে রোগীরাও সেটি করাতে চায় না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নারীদের সিজার করাতে নিরুৎসাহিত করছে বহু আগে থেকে। বাংলাদেশ সরকারও অপ্রয়োজনীয় সিজারকে সমর্থন করছে না। কিন্তু তারপরও যশোরে সিজার করা থামছে না। যশোর আড়াইশ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি অর্ধেক হলেও শহরের সব বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শতভাগ হচ্ছে সিজার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাভাবিক প্রসবে সন্তান জন্ম দেয়া মায়েদের তুলনায় সিজারিয়ান এসব মায়ের অপুষ্টি দ্বিগুণেরও বেশি বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণার তথ্যে পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত তিন বছরে যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েছে ৭ হাজার ৩শ ১৯ জন। তার মধ্যে নরমাল ডেলিভারি ৩ হাজার ৭শ ৮৯টি ও সিজার করা হয়েছে ৩ হাজার ৫শ ৩০টি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের কুইন্স, আদ-দ্বীন, একতা, কিংস, দড়াটানা, নোভা, একতা হাসপাতালসহ শহরের সব বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে মাসে গড়ে একশটি সিজার করা হয়। সেখানে বছরে নরমালে শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে যশোরে ঢাকা থেকে পরিচালিত ইবনে সিনা হাসপাতাল।
তারা কোনো রুগীকে সিজারে উৎসাহিত করে না।
বেসরকারিতে সবচেয়ে বেশি সিজার করে থাকেন গাইনি বিশেষজ্ঞ নার্গিস আক্তার মাসে ৩০-৪০টি, রেবেকা সুলতানা দীপা ২৫-৩০টি, নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার ৩০-৩৫টি, রীনা ঘোষ ২০-২৫টি, ইলা মন্ডল ২০-২৫টি। এসব চিকিৎসকরা যেখানে চিকিৎসা করেন সেসব হাসপাতাল বা ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে গত এক দশকে কোন নরমাল ডেলিভারির তথ্য পাওয়া যায়নি।
শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা তিন সন্তানের জননী মমতাজ পারভিন জানান, তার তিনটি সন্তানই সিজার করেছেন দড়াটানা হাসপাতালের ডাক্তার রেবেকা সুলতানার কাছে।
আরএন রোডের বাসিন্দা মর্জিনা খাতুন বলেন, ডাক্তার আমাকে দেখে নরমাল ডেলিভারি হবে না বলে এক ধরণের ভয় দেখান। সব মিলিয়ে ওই চিকিৎসক ৪০ হাজার টাকায় আমার সিজার করেন।
বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে সিজার করতে গড়ে খরচ হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হয় একটি সিজার করাতে। সিজারের ফলে সিজারিয়ানরা ফতুর হচ্ছে আর ডাক্তারদের পকেট ভারী হচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, কিটিক্যাল প্রসূতিদেরকে রেফার করা হয়। তাদেরকে শেষ মুহূর্তে সিজার করতে হয়। অনেকের আবার প্রথম শিশুটি সিজার করা থাকলে দ্বিতীয় শিশুটিকেও সিজার করা লাগে।